ঢাকা,শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

ডাক্তাররা রোগীদেরকে ৫০ ভাগই অপ্রয়োজনীয় ‍ওষুধ দেন

originalসি এন ডেস্ক :::
ওষুধ কোম্পানির প্ররোচনায় বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখেন। দেশের চিকিৎসায় ৫০ ওষুধই অপ্রয়োজনে প্রয়োগ করা হয়। যা রোগীকে বিভিন্নভাবে আরো অসুস্থ করে তুলছে।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের আলোচক ডাক্তার এইচ এম লেলিন চৌধুরী নিজেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে এ মন্তব্য করেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মোট আক্রান্ত রোগীর ৬০ ভাগ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত এবং ৪০ ভাগ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। মানুষ শুধু মুনাফার পিছনে ছুটতে গিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ধ্বংস বা দূষিত করছে। ফলে মানুষ নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ডাক্তাররা যে ওষুধ লিখে, তার ৫০ ভাগই অপ্রয়োজনীয়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়ে এই প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের বাধ্য করছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে কোনো প্রকার নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না। সকল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। উন্নত বিশ্বে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর হার চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দরকার।’

অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ এখন সভ্যতার অভিশাপ। সভ্যতার নামে পরিবেশ দূষিত, খাবার দূষিত করাসহ উন্নয়নের ভুল পথ মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা অপ্রয়োজনে বিদেশিদের অনুকরণ করছি। এ প্রবণতা রোধ করা দরকার। আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের অনুকরণে অ্যান্টিবায়োটিক হ্যান্ডওয়াসে যে হাত ধুয়া কর্মসূচি চালু হয়েছে তা আমাদের আগামী প্রজন্মকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে। পৃথিবীব্যাপী যখন এ রকম স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের বর্জনে ডাক আসছে। তখন কোম্পানিগুলোর প্ররোচনায় আমরা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করে মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নামে অ্যান্টিবায়োটিক হ্যান্ডওয়াসে হাত ধুতে প্রচারণা করছি।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অসংক্রামক রোগ প্রসারে পরিবেশ দূষণ, জীবন আচরণ ও খাদ্যাভাস দায়ী। মাত্রাতিরিক্ত ভাত খাবার অভ্যাস ডায়াবেটিস রোগের প্রভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাক সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘সরকার অসংক্রামক রোগের বিস্তারে চিন্তিত। তাই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাবে সরকারের অসংক্রামক রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বাজেটে রোগ প্রতিরোধকে না প্রাধান্য দিয়ে ক্রয় আর অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আর এই খাতগুলো দুর্নীতির ক্ষেত্র। সরকারের উচিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বেশি জোর দেয়া।’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আমির হোসেন বলেন, জনসচেনতার ফলে দেশে এখন তামাক ব্যবহারে মানুষ সর্তক হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো বসে নেই। তারা এখন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে।’

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলো দেশে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ছে। তারা দেশের মাইলের পর মাইল বনভূমি ধ্বংস করে পাবর্ত্য এলাকায় তামাক চাষ করছে। শিশু-কিশোরদের ধূমপানে উৎসাহ প্রদান করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অবহেলা করে তারা নানাভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। জনস্বার্থে ক্ষতিকর ও রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এই তামাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে পুরস্কার প্রদান করছে। জনস্বার্থ রক্ষায় অবশ্যই তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’

অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল হক বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫৯ শতাংশ মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়বেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে মারা যায়। অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ নেতিবাচক জীবনাচার, যেমন- তামাক ও বিভিন্ন ক্ষতিকর নেশা, ফাস্ট ফুড-জাংক ফুড ও কোমল পানীয়-মোড়কজাত কেমিক্যাল জুসের আধিক্য, অলসতা ও শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, মুটিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে হেলথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

পাঠকের মতামত: